চকরিয়া থেকে সংবাদদাতা:
.
কক্সবাজারের চকরিয়ায় স্কুলের পরীক্ষার ফি, বেতন সহ যাবতীয় টাকা দেওয়ার পরেও শুধু মাত্র প্রাইভেট কোচিং ফি দিতে না পারায় পরীক্ষার হল থেকে ১৫/২০ জন পরীক্ষার্থীকে বের করে দিল শিক্ষক। মঙ্গলবার লামা পৌরসভার পার্শ্ববর্তী চকরিয়া উপজেলার বমু বিলছড়ি ইউনিয়নের একমাত্র মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শহীদ আব্দুল হামিদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এই ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, মঙ্গলবার বিদ্যালয়টিতে বার্ষিক সমাপনী পরীক্ষার ধর্ম বিষয়ের পরীক্ষা চলছিল। পরীক্ষা শুরুতে শিক্ষার্থীদের খাতা দেয়া হয় এবং তারা লিখতে শুরু করলে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সেলিনা আক্তার বিভিন্ন শ্রেণীর ১৫/২০ জন শিক্ষার্থীর পরীক্ষার খাতা কেড়ে নেন এবং তাদের বিদ্যালয় থেকে বের করে দেয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এছাড়া বিদ্যালয়টির বিরুদ্ধে পিএসসি পাস করেনি এমন ছেলে মেয়েকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে ৬ষ্ট ও ৭ম শ্রেণীতে অনৈতিকভাবে পড়ার সুয়োগ দেয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। নির্দিষ্ট শিক্ষকের কাছে কোচিং না পড়লে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেয়া হয় বলে অনেকে জানায়। শিক্ষদের অতিরিক্ত টাকা আদায়ের কারণে গরীবের ছেলে মেয়েরা লেখাপড়া করতে পারছেনা।
স্কুলের ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ইরান আক্তার সহ আরো অনেকে বলে, আমরা পরীক্ষা ফি, স্কুল বেতন দিয়েছি। শুধুমাত্র প্রাইভেট কোচিং ফি ৪শত টাকা দিতে না পারায় আমাদের পরীক্ষা হল থেকে বের করে দেয় সেলিনা ম্যাডাম। আমরা প্রাইভেট পড়িনি তারপরেও নাকি কোচিং ফি দিতে হবে ! আমাদের মা-বাবা গরীব। তারা কি করে এত টাকা দিবে। মো. রিয়াজ নামে আরেক শিক্ষার্থী জানায়, ৭ম শ্রেণী ছাড়া অন্যান্য ক্লাসের আরো অনেককে টাকা দিতে না পারায় বের করে দিয়েছে শিক্ষকরা।
এ বিষয়ে সহকারী শিক্ষিকা সেলিনা আক্তার বলেন, আমি প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে টাকা তুলেছি। কয়েকজন শিক্ষার্থীকে একাধিকবার বলার পরেও টাকা না দেয়ার পরীক্ষার হল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল মোস্তফা বলেন, আমরা বে-সরকারী স্কুল। টাকা না তুললে কিভাবে চলবে ? আমি শুনেছি কয়েকজনকে পরীক্ষার হল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।
পরীক্ষার হল থেকে শিক্ষার্থীদের বের করার বিষয়ে পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কক্সবাজার জেলা পরিষদ সদস্য সুলতান আহমদ বলেন, বিষয়টি অত্যান্ত দুঃখজনক হয়েছে। আমাকে কেউ জানায়নি। আমি জানলে নিজ থেকে দিয়ে হলেও তাদের পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দিতাম। আসলে স্কুলটি বে-সরকারী এবং কোন প্রকার অনুদান পায়না। শুধুমাত্র ছেলে-মেয়েদের দেয়া ফি থেকে শিক্ষকদের বেতন ও বিদ্যালয়ের খরচ বহন করা হয়। বের করে দেয়া শিক্ষার্থীদের পুণরায় পরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা আমি করব এবং প্রয়োজনে পরীক্ষা দিতে না পারা বিষয়টি গড় মার্ক দিয়ে তাদের পাস করিয়ে দেয়া হবে।
শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার হল থেকে বের করার বিষয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমি সুপারভাইজার রতন বিশ্বাস বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলেছি। আগামীকাল থেকে বের করে দেয়া শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফিরিয়ে এনে পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে নির্দেশ প্রদান করেছি এবং ড্রপ পরীক্ষাটি ধারাবাহিক পরীক্ষা শেষে নেয়া হবে। বিষয়টি ন্যাক্কারজনক হয়েছে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুরউদ্দিন মুহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, বিষয়টা আমি শুনেছি। এবিষয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমি সুপারভাইজার কে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ ও বিস্তারিত আমাকে জানাতে বলেছি। কোনভাবে পরীক্ষার হল থেকে শিক্ষার্থীকে বের করে দিতে পারেনা শিক্ষক।